আমি তখন খুব ছোট, দিদি সবে মাত্র ইস্কুলে ভর্তি হয়েছে। আমাদের আশেপাশের কয়েকটা গ্রামের মধ্যে প্রথম কিন্ডারগার্ডেন ইস্কুলে দিদি ভর্তি হয়েছিলো। সেজুগে কিন্ডারগার্ডেন ইস্কুল কে সবাই কে-জি ইস্কুল নামেই ডাকতো। নীল সাদা ইস্কুলের পোশাক, পায়ে সাদা মোজা সাদা ক্যানভাস জুতো। গ্রাম থেকে ১ কিলোমিটার দূরে পাকা রাস্তা, ইস্কুল গাড়ি আসতো এই পর্যন্ত। চৌকো ঘেরা খাঁচার ভান গাড়ি।
তখনো বাবরি মসজিদ নিয়ে দাঙ্গা হয়নি, দেশে শান্তি ছিলো। আমাদের গ্রামেরই একটি হিন্দু পরিবারের দুই ভাইবোন আর আমার দিদি তাদের ইস্কুল যাত্রা এক সঙ্গে শুরু করেছিলো। দুই পরিবারের মধ্যে একটা প্রীতি ভাব ছিলো। আমারা তখনো পর্যন্ত ধর্মের রঙ বুঝতে পারিনি, কাদের গেরুয়া কাদের সবুজ। সুন্দর দিন কাটতো সে সব সময়।
দিদিদের ইস্কুলে মনে হয় দিদিই প্রথম মুসলিম ছাত্রী ছিলো। আমার যতদূর মনে পড়ে, সে সময় ইস্কুলে শবে বরাতের ছুটি থাকতো না। সেবার প্রথম শবে বরাত, ইস্কুলে ভর্তি হওয়ার পরে। শবে বরাতের আগের দিন দিদি ইস্কুল থেকে ফিরে আনন্দে মা কে বললো যে ইস্কুলের দিদিমণি আগামী কাল শবে বরাতের ছুটি নিতে বলেছে তকে একা। এ কথা শোনার পরে মা জানতে চাইল, দিদিমণি কি বলেছে দিদি কে। দিদি বললো যে, দিদিমণি বলেছে যে আগামী কাল মুসলিমদের শবে বরাত উৎসব, এবং যেহেতু শবে বরাতের কোন ছুটি নেই ও ইস্কুলে দিদিই একাই মুসলিম সে জন্য দিদি ওই দিন ছুটি নিতেই পারে।
এ কথা শুনে মা খুব খুশি হয়েছিলো, এটা ভেবে যে, তার মেয়ের শিক্ষা সত্যি যোগ্য শিক্ষিকাদের কাছেই হচ্ছে। মা দিদি কে বললো যে আগামী কাল শবে বরাত তো কি হয়েছে? শবে বরাত তো রাতে! ছুটি নেওয়ার কি আছে? তুই সকালে ইস্কুলে যাবি, আর ফিরে এসে রাতে শবে বরাত পালন করবি। মা খুশি হলেও, দিদি হয়তো এ কথায় খুশি হয়নি।
পরের দিন মা দিদি কে ইস্কুলের জন্য তৈরি করতে করতে বুঝিয়ে বলে দিচ্ছে, যে ইস্কুলে পৌঁছেই দিদিমণি কে দিদি কি বলবে। মা দিদি কে বললো, দিদিমণি কে বলবি যে শবে বরাত হচ্ছে রাতের উৎসব, সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয়। দিনের বেলা কিছু না। ইস্কুল করে বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায় শবে বরাত পালন করা যায়। সেই জন্য মা ছুটি নিতে বারন করেছে।
এর পরের ঘটনা আমার জানা নেই। দিদির এ কথা শুনে দিদিমণিরা কি বলেছিলেন আমি জানি না। আজ হঠাৎ আপিসে বসে ঘটনাটি মনে পড়ে গেলো। আজ রাতে শবে বরাত, আমারও আপিস থেকে ফিরে সন্ধ্যায় শবে বরাত। যদিও আমি আগামী কাল ছুটির আবেদন করেছি আমার বাৎসরিক ছুটি থেকে।
সঞ্জয় হুমানিয়া
৮ই মার্চ ২০২৩, বেঙ্গালুরু, কর্ণাটক, ইন্ডিয়া
★ আমার লেখায় অজস্র বানান ভুল থেকে যায়, পাঠকের চোখে পড়লে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ★
+ There are no comments
Add yours